1 Answer

0 like 0 dislike
by
মতিহারের সবুজ চত্বরে বেষ্টিত বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ও উত্তরবঙ্গের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ৬৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ। দীর্ঘ ইতিহাস ও ঐতিহ্যের প্রতীক এই বিশ্ববিদ্যালয়। মূলত ভাষা আন্দোলনের কিছুদিন আগ থেকেই অর্থাৎ ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর রাজশাহীতে স্যাডলার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পক্ষে আন্দোলন শুরু হয়। ১৯৫০ সালের ১৫ নভেম্বর রাজশাহীর বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে ৬৪ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। পরে ১৯৫৩ সালের ৩১ মার্চ প্রাদেশিক আইনসভায় রাবি প্রতিষ্ঠা আইন পাস হয়। একই বছরের ৬ জুলাই বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, রাজশাহী কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ ড. ইতরাৎ হোসেন জুবেরীকে উপাচার্য নিয়োগের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়। ১৯৫৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর আনুষ্ঠানিকভাবে রাবির কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৫৪ সালে পদ্মাতীরের বড় কুঠি নামে পরিচিত ঐতিহাসিক রেশম কুঠির ওপরতলায়। এরপর ১৯৬১ সালে রাবির শিক্ষা কার্যক্রম স্থানান্তর করা হয় মতিহারের সবুজ চত্বরে। এই ক্যাম্পাসটি গড়ে ওঠে অস্ট্রেলিয়ান স্থপতি ড. সোয়ানি টমাসের স্থাপত্য পরিকল্পনায়। শুরুতে ৭টি বিভাগে ১৫৬ জন ছাত্র এবং ৫ জন ছাত্রী নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হলেও বর্তমানে প্রায় ৩৫ হাজার শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। শিক্ষক রয়েছে প্রায় এক হাজার ৩০০।

বিভিন্ন সময়ে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের আন্দোলনে রাবি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। '৬২-এর শিক্ষা আন্দোলন, '৬৬-এর ছয় দফা, '৬৯-এর গণআন্দোলন, '৭০-এর সাধারণ নির্বাচন, '৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং '৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী গণআন্দোলনে রাবির শিক্ষক ও ছাত্রসমাজ অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। ছাত্র-শিক্ষক ঝাঁপিয়ে পড়েছে অত্যাচার আর শোষণের বিরুদ্ধে। ষাটের দশকের শেষ দিকে এই ভূখণ্ড যখন গণআন্দোলনে উত্তাল, তখন রাবির শিক্ষার্থীরাও স্বাধিকার চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। ১৯৬৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি গণঅভ্যুত্থান চলাকালে তৎকালীন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাত থেকে নিজের জীবনের বিনিময়ে ছাত্রদের জীবন বাঁচাতে গিয়ে পাকিস্তানি বাহিনীর গুলিতে শহীদ হন বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বজন শ্রদ্ধেয় শিক্ষক তৎকালীন প্রক্টর ড. শামসুজ্জোহা। তাছাড়াও ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হবিবুর রহমান, অধ্যাপক সুখরঞ্জন সমাদ্দার, মীর আবদুল কাইয়ুমসহ অনেক ছাত্র ও কর্মকর্তা-কর্মচারী।

প্রায় ৩০৪ হেক্টরজুড়ে (৭৫৩ একর) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে ৫টি উচ্চতর গবেষণা ইনস্টিটিউট, ৯টি অনুষদের অধীনে ৫৭টি বিভাগে বর্তমানে পরিচালিত হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম। শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে ১৭টি আবাসিক হল। এর মধ্যে ছাত্রদের জন্য ১১টি, ছাত্রীদের ৫টি হল এবং গবেষকদের জন্য রয়েছে একটি ডরমিটরি। পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তজুড়ে রয়েছে শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য আবাসিক ভবন। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় রয়েছে দেশের প্রথম জাদুঘরখ্যাত বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর, শহীদ মিনার, রয়েছে শিল্পী নিতুন কুণ্ডের অমর কীর্তি মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ভাস্কর্য 'সাবাশ বাংলাদেশ'। বিশ্ববিদ্যালয় শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালা নামক একটি মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুবর্ণজয়ন্তী সুউচ্চ মেটালিক টাওয়ার, বধ্যভূমি স্মৃতিস্তম্ভ, মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ভাস্কর্য বিদ্যার্ঘ্য, ড. জোহার প্রতিকৃতি ও বিজয় সাগর।

প্রায় চার লাখ দেশি-বিদেশি বই সমৃদ্ধ কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার। এ ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল ও ভবনগুলোতে রয়েছে ওয়াইফাই ও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সুবিধা। 

এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বহু খ্যাতিমান পণ্ডিত, গবেষক ও জ্ঞানতাপসের ছোঁয়া রয়েছে। বহু ভাষাবিদ ও জ্ঞানতাপস ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্, ভাষাবিজ্ঞানী ড. এনামুল হক, প্রখ্যাত তাত্ত্বিক রাজনীতিবিদ বদরুদ্দীন উমর, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক প্রধান উপদেষ্টা প্রয়াত বিচারপতি হাবিবুর রহমান, খ্যাতনামা ঐতিহাসিক ডেভিড কফ, বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন, বিখ্যাত নৃবিজ্ঞানী পিটার বার্টচী, প্রফেসর ড. এমএ বারীসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। বর্তমানে যারা দেশ পরিচালনা করছেন, তাদের অনেকেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। এখনও রাবিতে অনেক বরেণ্য পণ্ডিত শিক্ষক রয়েছেন।

শিক্ষার সার্বিক পরিবেশ, গবেষণার সুনাম, প্রভাব, অভিনবত্ব ও আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গি অর্জনের ক্ষেত্রে রাবি যথেষ্ট এগিয়ে। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় শিক্ষার মান নিশ্চিতকরণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নানাবিধ প্রকল্প কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। রাবি নানাবিধ শিক্ষা উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে নিজেদের গবেষণার মান ও অভিনবত্ব সৃষ্টিতে আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা সম্ভাবনার সুযোগ থাকলেও সংকটও রয়েছে অনেক। মূলত শিক্ষার্থীদের আবাসন সমস্যাই সবচেয়ে প্রকট। এখনও প্রায় ৭৫ শতাংশ শিক্ষার্থীকে থাকতে হচ্ছে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ক্যাম্পাসের বাইরে। এ ছাড়াও শ্রেণিকক্ষ ও পরিবহন সংকটও রয়েছে প্রকট।

সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষায় শিক্ষিত করে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার মহান উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে ৬৪ বছর অতিক্রম করে ৬৫ বছরে পা রাখল। বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম সাক্ষী রাবি তার শৈশব, কৈশোর, যৌবন পার করেছে শিক্ষা, গবেষণা, সাংস্কৃতিক অঙ্গন, খেলাধুলা, প্রতিটি ক্ষেত্রে অসামান্য সফলতা অর্জন করে। আমাদের প্রত্যাশা, দিন দিন এই সফলতা অনেক গুণে বেড়ে যাবে, এগিয়ে যাবে বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষার্থী। আমাদের বিশ্বাস, রাবি দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে একটি উজ্জ্বল প্রতীক হয়ে থাকবে।

সুত্র: সমকাল

2,114 questions

2,171 answers

14 comments

41 users

Ask BCS Question এ আপনাকে সুস্বাগতম, এখানে আপনি প্রশ্ন করতে পারবেন এবং অন্যান্য সদস্যদের নিকট থেকে উত্তর পেতে পারবেন।

বিগত 30 দিনের জনপ্রিয় প্রশ্ন

Categories

...