ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ইতিহাস ও পটভূমি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার এরকম নানা প্রস্তাব ও উদ্যোগের ঐতিহাসিক দলিলপত্র একত্রিত করে একটি বড় ধরণের প্রকাশনার কথা চিন্তা করছেন তরুণ গবেষক রাশেদ রাহম। তাঁর লক্ষ্য বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি নথিপত্র, দলিলাদি ও প্রকাশনার সংকলন করে ১৯০৫ থেকে ১৯২৫ সময়কালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট ও ইতিহাসের একটি প্রামাণ্য বই প্রস্তুত করা। এর আগে ত্রৈমাসিক প্রতিচিন্তায় লিখিত তাঁর ‘ইতিহাসের আলোকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’ শীর্ষক প্রবন্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস নিয়ে তাঁর দীর্ঘ প্রস্তুতি, গবেষণা ও অভিনিবেশের প্রমাণ পাওয়া যায়। প্রবন্ধটি বহুল পাঠ্য হয়েছিল।
আইন পেশার সাথে জড়িত এই তরুণ গবেষক ইতোমধ্যে তাঁর কাজের একটি রূপরেখা দাঁড় করিয়েছেন। এ প্রস্ঙ্গে তিনি দ্য ফাইনান্সিয়াল এক্সপ্রেসকে বলেন, “ঢাকা ও কলকাতার বিভিন্ন গ্রন্থাগার ও আর্কাইভে অনেক দলিলপত্র সংরক্ষিত আছে। । সেগুলো ব্যবহার করে এই কাজটি করা সম্ভব। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ইতিহাসবিদ ও গবেষকদের প্রকাশিত বই-পত্রও সহায়ক হিসেবে পাওয়া যাবে।”
রাশেদ রাহম অবশ্য ১৮৫৭-১৯১২ সময়কালকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃহত্তর প্রেক্ষাপট হিসেব তুলে ধরতে চান। আর ১৯১৩-১৯২০ সময়কালে এই বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলার রূপরেখার ওপর আলোকপাত করতে চান।
তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক যাত্রা ও প্রাথমিক ভিত্তিপ্রস্তরের সময়কাল হিসেবে ১৯২১-১৯২৫ কে দেখতে চান দলিলপত্রাদির মাধ্যমে।
দলিলপত্র বলতে এই গবেষক বিভিন্ন সরকারি নথি, চিঠিপত্র, প্রশাসনিক নোট, পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ-সম্পাদকীয়, প্রবন্ধ-নিবন্ধ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের লিখিত কার্যবিবরণী, রাজনৈতিক-সামাজিক নেতাকর্মীদের লিখিত রচনা, চিঠিপত্র ইত্যাদিকে বোঝাচ্ছেন যেগুলোতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রসঙ্গটি স্থান পেয়েছে। তাঁর বিশ্বাস, এরকম অনেক কিছু বিভিন্ন সময়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে প্রকাশিত হয়েছে, আবার বেশকিছু অপ্রকাশিত রয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন যে ১৯১১ সালের ১৯ আগস্ট ঢাকার কার্জন হলে প্রাদেশিক গভর্নর ল্যান্সলেট হেয়ারের বিদায় সম্ভাষণ এবং চার্লস বেইলীর শুভাগমন উপলক্ষ্যে এক সংবর্ধনা সভার আয়োজন করা হয়।
সেখানে ‘পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রাদেশিক মুসলিম সমিতি’ ও ‘পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রাদেশিক মুসলিম লীগ’-এর পক্ষ থেকে দুটি মানপত্র দেওয়া হয়, যেখানে ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের দাবি অন্তুর্ভুক্ত ছিল। ৩ ভাদ্র, ১৩১৮ (২০ আগস্ট, ১৯১১) ঢাকা প্রকাশ পত্রিকার সংবাদ থেকে এ তথ্য জানা যায়।
উল্লেখ্য, মানপত্র দু’টি প্রণয়ন ও পাঠ করেছিলেন যথাক্রম নওয়াব স্যার সলিমুল্লাহ ও সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধরী। এই দু’জন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন যদিও ১৯১৫ সাল ইন্তেকাল করায় নওয়াব সলিমুল্লাহ এর বাস্তবায়ন দেখে যেতে পারেননি। তবে নওয়াব আলী চৌধুরী ১৯২৯ পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সাথে ওতোপ্রতোভাবে জড়িয়ে ছিলেন। তিনি ছিলেন টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীর জমিদার। তিনি অবিভক্ত বাংলার প্রথম মুসলমান মন্ত্রী ছিলেন।
“ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, এর ইতিহাস ও পটভূমি, আমাদের সামাজিক-রাজনৈতিক ইতিহাসের একটি বিশেষ অধ্যায়। অথচ এ-বিষয়ক আলোচনা প্রকাশনা এখনো প্রধানত স্মৃতিনির্ভর গাল-গল্প, অতীত গৌরব গাঁথার মিথ দ্বারা ভারাক্রান্ত হয়ে রয়েছে। এসব দলিলপত্র সংকলিত হলে এই বিষয়ে তথ্যসমৃদ্ধ ও যৌক্তিক আলোচনার
সূত্রপাত করা সম্ভব হবে,” বলেন রাশেদ রাহম।